১৮০০ সালের দিকে যখন সর্বপ্রথম সাইকোলজি বিষয়টা নিয়ে সারা পৃথিবী সরগরম হয়ে গিয়েছিল, তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অনেকেই বিশ্বাস করেন না, সাইকোলজি আসলেই বিজ্ঞানের অংশ কি না!
কারণ সাইকোলজি হচ্ছে মানুষের মন নিয়ে পড়াশোনা ও রিসার্চ!
কিন্তু মনকে দেখা যায় না, শোনা যায় না, ধরা যায় না – এমনকি কোনোভাবে মনের পরীক্ষা নেয়া যায় না! কিন্তু বিজ্ঞানের অন্যান্য সব খাতেই যেটা নিয়ে পরীক্ষা করা দরকার সেটা সম্ভব হয়! যেমনঃ অ্যাস্ট্রোনমি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ইত্যাদি।
একইসাথে সাইকোলজিতে রিসার্চ করাটা বেশ জটিল। কারণ ব্রেইন আমাদের শরীরের অনেক কম্পলিকেটেড একটা পার্ট!
আচ্ছা, বিজ্ঞান শব্দের মানে ‘বিশেষ জ্ঞান’ তাই না?
তো সেই হিসেবে, বিজ্ঞান শব্দটার আসলে কোনো স্ট্যান্ডার্ড সঙ্গা নেই!
যদিও অনেক ব্যক্তি, সায়েন্স বা বিজ্ঞানকে যে সঙ্গায় সঙ্গায়িত করে থাকেন সেটা হচ্ছে,
“বিজ্ঞান হচ্ছে বিশেষ নিয়মের মধ্যে গঠিত প্রাকৃতিক ইভেন্ট। যেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন বিশেষ জ্ঞানের নিয়মকানুন ও আইন তৈরি করা হয়ে থাকে। সেসব নিয়মকানুন তৈরি হওয়ার পর সেগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।”
বিজ্ঞানকে আমরা পাঁচটা ধাপের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারি,
অবজারভেশন, হাইপোথিসিস, এক্সপেরিমেন্টেশন, অ্যানালাইসিস এবং কনক্লুশন।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পার্টিক্যাল ফিজিসিস্টরা হিগস বোসন কনা সরাসরি দেখতে পারেন না। সেক্ষেত্রে এটাকে তারা পরিসংখ্যানের দ্বারা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন। কিন্তু তার মানে তো এটা নয় যে, পার্টিক্যাল ফিজিক্সের কোনো অস্তিত্ব নেই!
তাই না?!
মূলকথা হচ্ছে, একজন সায়েন্টিস্ট যেভাবে ইচ্ছে যেভাবে চান তার বিষয় নিয়ে রিসার্চ করতে পারেন, ব্যাখ্যা করতে পারেন আর পড়াশোনা করতে পারেন। আর এর উপরেই বিজ্ঞান নির্ভর করে।
সে হিসেব থেকে দেখলে ‘সাইকোলজি’ কেন আলাদা হতে যাবে?
সাইকোলজি হচ্ছে ‘মনোবিজ্ঞান।’
একজন ব্যক্তি যিনি মানুষের মন নিয়ে পড়াশোনা করেন, রিসার্চ করেন – তিনিই সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী।
একজন সাইকোলজিস্ট যখন মানুষের মন আর আচার-ব্যবহার নিয়ে কোনো নতুন ধারণা খুজে পান – তখন তিনি সেটাকে একটি ‘টেস্টেবল হাইপোথিসিস’ এর মধ্যে ফেলেন।
আর সেটাকে তিনি বারবার পরীক্ষা করে দেখেন, এই হাইপোথিসিস মানুষের মন কিংবা আচার-ব্যবহারে কি রকম প্রভাব ফেলে!
তারপর তিনি যখন একই হাইপোথিসিস দিয়ে পরীক্ষার জন্য বেশ কিছু ঘটনা একসাথে মেলানোর চেষ্টা করেন – তখন তিনি সাবজেক্টদের অর্থাৎ, যার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে – তাদের উপর একটি আনকন্ট্রোলড অবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এখানে তিনি ‘কি’ এবং ‘কোথায়’ এই প্রশ্নদুটোর পরীক্ষা করে উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন!
তারপর যেসব সাবকেজক্টদের ইভেন্ট আর বিহেভিয়ার মিলে যাবে, সেগুলোকে তিনি একসাথে নিয়ে যাবেন পরের ধাপে – যেখানে তিনি পরীক্ষা করবেন ‘কেন’ এর উত্তর নিয়ে!
তারপরে তিনি সাহায্য নেবেন পরিসংখ্যানের। যেখান থেকে তিনি দেখবেন,
আসলেই তার হাইপোথিসিস কতটা কার্যকরী!
এবার উত্তর দিন, সাইকোলজি কি বিজ্ঞান নয়?
যারা সাইকোলজিকে বিজ্ঞানের মধ্যে ফেলতে চান না, তাদের প্রশ্ন করতে শুনবেন,
“সাইকোলজি যদি বিজ্ঞান হয়ে থাকে তাহলে ‘সুখের’ সঙ্গা সাইকোলজি কিভাবে দেবে? আর বিজ্ঞানে সবকিছুই মাপা যায় কিন্তু সুখ মাপে কীভাবে?”
সেই হিসেবে সাইকোলজিস্টরা উত্তর দেবেন, ‘সুখ’ ডিপেন্ড করে অনেক বিষয়ের উপর। সুখ হচ্ছে মস্তিষ্কে নির্গত এক ধরণের নিউরোক্যামিকেলের রিয়েকশন।
এটাকে মাপা হয় বিভিন্ন ধরণের ‘অপারেশনালাইজ’ পদ্ধতিতে।
যেমন, একটা লোক সুখী কিনা বা কতটা সুখী নাকি আদৌ সুখী নয়, সেটা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তরেই বের হয়ে আসবে,
লোকটা সারাদিনে কতক্ষণ হাসে?
লোকটা কীভাবে হাসে?
লোকটা নিজে তার হাসিকে এক থেকে দশের মধ্যে কত মার্ক দেবে?
লোকটার মস্তিষ্কে কতটা এন্ডোরফিন সারাদিনে রিলিজ হচ্ছে?
দ্যাটস অল!
তাহলে শেষমেশ কী দাঁড়াচ্ছে?
সাইকোলজিও কেমিস্ট্রি ও পদার্থবিজ্ঞানের মতোই – একটা বিজ্ঞান।
অনেকেই আছেন যারা সাইকোলজিকে ‘স্যুডোসায়েন্সের’ মধ্যে ফেলে দেন। কিন্তু তারা এটা ভুলে যান যে, স্যুডোসায়েন্স ফিকশন নিয়েও কাজ করে কিন্তু সাইকোলজি শুধুমাত্র ফ্যাক্ট নিয়ে কাজ করে।
তো এই হচ্ছে, সাইকোলজির সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক আর কীভাবে বিজ্ঞানের একটা সাবজেক্ট হচ্ছে, মনোবিজ্ঞান।
যদি আর্টিকেলটি থেকে কিছু একটা শিখতে পারেন বা কোনো কাজে আসে – তাহলে প্লিজ রিয়েক্ট অন ইট! শেয়ার দিস আর্টিকেল, ইট হেল্পস ম্যান!
থ্যাংক ইউ!
স্টে পজিটিভ স্টে স্ট্রং