৩০০০০+ শিক্ষার্থী ও ক্লায়েন্টের ফিডব্যাক, সাক্সেস স্টোরি ও প্রশংসা

দ্রুত স্কিল ডেভেলপমেন্ট করবেন কিভাবেঃ ৫টা স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি

আপনি হয়তো এটা প্রায়ই শুনে থাকেন, যেকোনো স্কিল শেখার পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। কিন্তু এই কথাটা সত্য নয়!

সত্যটা হচ্ছে, যেকোনো স্কিল শেখার পেছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়, অনেক সময় নয়। ‘যথেষ্ট’ আর ‘অনেক’ এর ভেতর অনেক পার্থক্য!

স্কিল ডেভেলপমেন্ট মানে, ‘অনেক সময় দিয়ে’ কোনো স্কিল শেখা নয় — বরঞ্চ ‘যথেষ্ট সময় দিয়ে’ সঠিক স্ট্র্যাটেজি অ্যাপ্লাই করে স্কিল শেখাই হচ্ছে স্কিল ডেভেলপমেন্ট।

আপনার ডেইলি রুটিন বা টু-ডু লিস্টের মাঝে বেশ কিছু স্ট্র্যাটেজি যুক্ত করে দিয়ে আপনার পক্ষেও; স্কিল ডেভেলপমেন্ট, শিক্ষা আর লার্নিংয়ের পেছনে সময় দেয়া সম্ভব। আর শুধু এই স্ট্র্যাটেজিগুলোই নয়, আরো অনেক ধরণের ট্যাকটিকস ও সিস্টেমস রয়েছে – দ্রুত যেকোনো স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য!

আমার এই আর্টিকেল লেখার কারণ, ৫টা স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি শেয়ার করা – যেগুলো আপনার লার্নিং জার্নিকে আরো সহজ, স্ট্র্যাটেজিক এবং এফেক্টিভ করে তুলবে।

১. শুরুতেই মূল গোল/লক্ষ্য ঠিক করা

আপনি আসলে কি শিখতে চাইছেন এবং কেন শিখতে চাইছেন – এই দুটো প্রশ্নের উত্তর শুরুতেই লিখে ফেলুন। এই দুটো প্রশ্নের উত্তরেই নির্ভর করছে, আপনি আসলে আপনার লার্নিং গোল/লক্ষ্য ঠিক করতে পেরেছেন কি না!

খুব সহজ মনে হচ্ছে, তাই না?

বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু এই লক্ষ্য ঠিক করতে পারে না বলে, অমুক-তমুক স্কিলের পেছনে ৬/১২/২০/৩০ মাস দেয়ার পরেও সেটাকে নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে না! যার ফলে, তারা ডিসট্রাকটেড হয়ে যায় বা মোটিভেশন হারিয়ে ফেলে।

এভাবে আপনার লক্ষ্যটাকে ঠিক করুনঃ

“আমি ৩০ দিনে স্প্যানিশ শিখে ব্যাসিক কনভার্সেশন করতে চাই” অথবা “আমি দুই সপ্তাহে ক্যানভা ও চ্যাটজিপিটি সম্পর্কে ব্যাসিক ধারণা নিয়ে ফেলবো” কিংবা “আমি ৪ সপ্তাহে কপিরাইটিং শিখে অন্তত ৫০ ডলার ইনকাম করতে চাই!”

আপনার লক্ষ্যগুলো ঠিক করে, সেগুলো এমন জায়গায় লিখে রাখুন; যেখানে লিখে রাখলে, প্রত্যেকদিন আপনি সেই লক্ষ্যগুলো দেখতে পাবেন। আর এটাই আপনার রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে, সামনে এগিয়ে যেতে। Dominican University এর একটা স্টাডি অনুসারে, যারা তাদের গোল লিখে রাখে তাদের সফলভাবে সেই লক্ষ্যগুলো কমপ্লিট করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অন্তত ৪২%

যখন আপনার ব্রেইন বুঝতে পারে, আসলে আপনি কি চাইছেন; তখন পুরো প্ল্যান সফলভাবে এক্সিকিউট করা সহজ হয়ে যায়। তাই না?


২.ছোট ছোট অংশে ভাগ করে শেখাঃ বাইট সাইজড লার্নিং

একটা ইংরেজি প্রবাদ আছে,

“How do you eat an elephant? One bite at a time.”

এই একই সূত্র প্রয়োগ করবেন শেখার ক্ষেত্রেও। পুরো লার্নিং মডিউল একসাথে কনজ্যুম না করে – সেটাকে ভেঙে ভেঙে, যতটুকু একসাথে শেখা সম্ভব হয় – শেখার চেষ্টা করতে পারেন। এই ট্যাকটিককে বলা হয়, “chunking/চাংকিং!”

যদি আপনি কোডিং শিখতে যান, তাহলে পুরো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ একসাথে শেখার চেষ্টা না করে; ব্যাসিক সিনট্যাক্স শিখে তারপর ফাংশনগুলো শিখলেন তারপর ধীরে ধীরে অ্যাডভান্সড মডিউলের দিকে এগুতে থাকলেন। এতে যেকোনো স্কিলই সহজে হজম করা যায়!

অ্যাপ্লাইড সাইকোলজির একটা জার্নাল থেকে জানা যায়, ২০-২৫ মিনিট শিখে তারপর একটা ব্রেক দিয়ে আবার শেখা শুরু করলে এবং এই প্রসেস রিপিট করতে থাকলে; যেকোনো স্কিল সহজে শেখার সম্ভাবনা ২৫% বেড়ে যায়। সেজন্যে, ৩ ঘন্টার একটা কোর্স একসাথে কমপ্লিট না করে, ছোট ছোট লেসনে ভাগ করে করে শেখার চেষ্টা করুন।


৩. ২০% রুলঃ প্যারিতো প্রিন্সিপ্যাল অ্যাপ্লাই করুন

প্যারিতো প্রিন্সিপ্যাল বা ৮০/২০ রুল কিংবা ২০% রুল অনুসারে, আপনার কাজের ৮০% সফলতা আসে, ২০% এফোর্ট থেকে। সুতরাং, যখন আপনি কোনোকিছু শিখছেন তখন শুরুতেই সেই টপিকগুলো শেখার চেষ্টা করুন, যেগুলো আপনার সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে।

অর্থাৎ, আপনি যদি স্বাস্থ্যবান হতে চান তাহলে আপনার মূল মনোযোগ থাকা উচিত স্কোয়াট বা ডেডলিফট কিংবা পুশআপের মতো এক্সারসাইজগুলোতে। অথবা আপনি যদি গিটার শিখতে চান, তাহলে আপনার মূল মনযোগ থাকা উচিত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কর্ডগুলোর দিকে; কারণ সেগুলোই আপনি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করবেন, ভবিষ্যতে!

যারা টিম ফেরিসের 4-Hour Workweek বইটা পড়েছেন, তারা জানেনঃ কঠোর পরিশ্রম থেকে সফলতা আসে না। সফলতা আসে, বুদ্ধি দিয়ে পরিশ্রম করলে। সেজন্যে শুরুতেই এমন কাজগুলো করুন, যেগুলো আপনার পুরো দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে ধরে রেখেছে।

স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও, সেই ২০% স্কিলগুলো আগে শিখুন যেগুলো আপনার লাইফের ৮০% সময় কাজে আসবে।


৪. হাত ময়লা করতেই হবেঃ প্র্যাকটিস নেই, স্কিল নেই

একটা স্কিলের ভিডিও দেখা বা বই পড়া কিংবা ওয়ার্কশপে যুক্ত হওয়া আর সেটাকে অ্যাকচুয়েলি রিয়্যাল লাইফে কাজে লাগানো – রাতদিনের তফাৎ!

যদি দ্রুত কোনো স্কিল শিখতে চান, তাহলে হাত ময়লা করতেই হবে – প্র্যাকটিস করতেই হবে। আর এটাই, অ্যাক্টিভ লার্নিং। প্যাসিভ লার্নিংয়ের চেয়ে, অর্থাৎ শুধু কোর্স করা বা বই পড়া বা ওয়ার্কশপ করার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি এফেক্টিভ – অ্যাক্টিভ লার্নিং।

ফটোগ্রাফি শিখতে চাইছেন? ম্যানুয়াল পড়া বন্ধ করে ফটোশুট শুরু করুন, ক্যামেরার ফাংশনগুলো নিজে নিজে প্র্যাকটিস করে দেখুন। যত বেশি ভুল করবেন, ততো বেশি শিখবেন।

লার্নিং পিরামিড মডেল অনুসারে, আমরা যখন কোনোকিছু প্র্যাকটিস করি তখন সেটার ৮০% আমরা কাজে লাগাতে পারি অথচ শুধু প্যাসিভ লার্নিং করলে, সেই এফেক্টিভনেস কমে যায় প্রায় ৯০%।

“Learn, Do, Review” নামে একটা লার্নিং সার্কেল রয়েছে। এই সার্কেল অনুসারে, একটু শিখবেন (Learn) তারপর সেটা প্র্যাকটিস করবেন (Do) এবং সবার শেষে রিভিউ (Review) করবেন কোনটা শিখেছেন আর কোনটা শিখতে পারেন নি। যত দ্রুত এই সার্কেল অ্যাপ্লাই করতে পারবেন, ততো দ্রুত নতুন স্কিল শিখতে পারবেন।


৫. শিখুন ও শেখানঃ দ্য ফাইনম্যান টেকনিক

এই লার্নিং টেকনিক আপনার লার্নিংয়ের রিটেনশন ক্ষমতা ৪০০% বাড়িয়ে দিতে সক্ষম!

অল্প সময়ে দ্রুত শেখার জন্য এই লার্নিং টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন! খুবই পরিচিত এই লার্নিং টেকনিক হয়তো, অনেকেই জানেন! যারা জানেন না, তারা এই লার্নিং টেকনিক অ্যাপ্লাই করতে পারেন – যেকোনো স্কিল ডেভেলপমেন্ট কিংবা পড়াশোনার ক্ষেত্রে!

Feynman Technique এর নামকরণ করা হয়েছে, ফিজিসিস্ট রিচার্ড ফাইনম্যানের একটা ম্যাথড থেকে! যেটাকে এক কথায় বলা যায়, শেখানোর মাধ্যমে শেখা বা Learning by Teaching

আইডিয়াটা খুবই সহজ, যদি আপনি কোনো ব্যক্তিকে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারেন, তাহলে আপনি সেটা আসলেই জানেন!

একটা বিষয় শেখার পর – আপনার যেকোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্য বা কেউ না থাকলে, আপনি নিজেকেই সেই বিষয়টা বোঝাতে শুরু করুন, শেখাতে শুরু করুন! এক্ষেত্রে আপনার বোঝার ক্ষমতাও আরো বাড়বে এবং যেসব জায়গায় আপনার কমতি রয়েছে সেই পয়েন্টগুলো বের হয়ে আসবে!

আমার প্রথম কোর্স তৈরির করার পেছনে কারণও এটাই ছিলো, শেখানোর মাধ্যমে শেখা! তারপর সেটার চাহিদা ও অন্যান্য মেট্রিক্স দেখে, সেটাকে মনিটাইজ করার চিন্তা মাথায় আসে!


যেকোনো স্কিল শেখার ক্ষেত্রে, এই স্ট্র্যাটেজিগুলো আপনাকে খুবই সাহায্য করবে। আপনার ডেইলি রুটিনে এই স্ট্র্যাটেজিগুলোকে যুক্ত করুন এবং আজ থেকেই অ্যাপ্লাই করা শুরু করুন।

গত ১২ বছর ধরে অ্যাক্টিভ লার্নিংয়ের সাথে যুক্ত থাকার পর এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টে প্রত্যেকদিন অন্তত ৫/৭ ঘন্টা ব্যয় করার পর – বেশ কিছু পয়েন্ট শিখেছি যেগুলো আমাকে শুরুতে কেউ বলে দেয় নি। এগুলো, আপনার লার্নিংয়ের সময় মাথায় রাখতে ভুলবেন নাঃ

১. ৬৬ দিনের দরকার পড়ে, একটা নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে। অন্তত ৬৬ দিন মনোযোগ দিন লার্নিংয়ে। কনসিসটেন্সি ছাড়া লার্নিং সম্ভব নয়।

২. প্রত্যেকদিন কিছু সময়, সেটা ৫ মিনিট হোক কিংবা ৫ ঘন্টা – লার্নিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখুন। রিপিট করছি, প্রত্যেকদিন।

৩. মোবাইলে দেখুন, DND অপশন রয়েছে, অর্থাৎ Do Not Disturb মোড। সেটার ব্যবহার করুন।

৪. আমরা যদি কোনো কারণে ডিসট্রাকট হয়ে যাই তাহলে সেটাতে আবার মনোযোগ নিয়ে আসতে প্রায় ২৩ মিনিট সময় লাগে। তারচেয়ে, একটু একটু করে, ধীরে ধীরে শিখুন। খরগোশ-কচ্ছপের গল্পটা মনে আছে না?!

৫. লার্নিং করার সময় যদি বিরক্ত অনুভব হয়, তার মানে আপনার মোটিভেশন নেই। নিজেকে মোটিভেট করা শিখুন! ব্রেইন মোটিভেটেড থাকলে, হৃদয় পজিটিভ থাকবে।

৬. নিজের প্রোডাক্টিভিটি গ্রোথ, জার্নাল করুন – ডকুমেন্ট করুন। কতটা এগুচ্ছেন, কেন এগুচ্ছেন, ভবিষ্যত কী করবেন, কিভাবে এগুবেন – এগুলো আগে থেকেই তৈরি থাকলে, সেটা আপনার সাহস যোগাবে।

চোখ বন্ধ করে, আজকে থেকে ছয় মাস পর নিজেকে দেখার চেষ্টা করুন। আপনার ছয় মাস পরের ভার্সন হয়তো, সেই ভাষাটা জানে কিংবা সেই স্কিলটা জানে অথবা সেই স্কিলটাকে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করছে।

আপনার সেই ভার্সনের সাথে আজকের ভার্সনের পার্থক্য শুধু এক জায়গায় – অ্যাকশন নেয়ার ক্ষেত্রে।

আজকে থেকে শুরু করলে, সেই ছয় মাস পরের আপনার নতুন ভার্সনের কাউন্টডাউন আজ থেকেই শুরু হবে। যত আপনি দেরী করবেন, ততো আপনিই পিছিয়ে পড়বেন!

মনে রাখবেন, একটা স্কিলে পারফেক্ট হওয়া আপনার মূল লক্ষ্য নয় — একটা স্কিল শিখে সেটাকে কাজে লাগাতে পারাটাই; মূল লক্ষ্য। সেজন্য, সঠিক স্ট্র্যাটেজি অ্যাপ্লাই করে, নিয়মিত লার্নিংয়ে সময় দিয়ে প্র্যাকটিস করলে – আপনি যেটা এখন ভাবছেন, সেটাই করা সম্ভব।

কিন্তু, শুরু করতে হবে!

যত ছোট ধাপ দিয়েই শুরু করুন না কেন, সেটা আপনার প্রথম ধাপ; সামনে এগুনোর দিকে। আর আপনি হয়, সামনে এগুচ্ছেন নাহয় পিছিয়ে যাচ্ছেন – কারণ সময় আর সমাজ; আপনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে না।

8 thoughts on “দ্রুত স্কিল ডেভেলপমেন্ট করবেন কিভাবেঃ ৫টা স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top