নভেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত, ২০০০০ টাকার বিজনেস বান্ডেলে ৫৫% অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট

৭টা স্কিল, প্রত্যেক স্কুলে শেখানো উচিত

আচ্ছা — স্কুলে আমরা যা শিখেছি, সেটার কতটুকু আসলে প্র্যাকটিকাল লাইফে কাজে আসছে?

মনে পড়ছে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে অ্যালজেবরার সূত্র মনে রাখার জন্য আমরা কত কিছু করেছি! কিংবা, পর্যায় সারণী মুখস্থ করার জন্য কত ফর্মুলা অ্যাপ্লাই করেছি! আচ্ছা, সেগুলোর কতটা আমাদের রিয়্যাল লাইফে কাজে আসছে, নিয়মিত?

ততোটা নয়, যতটা আপনার কাজে আসছে, টাকা ম্যানেজ করা কিংবা এফেক্টিভ কমিউনিকেশন অথবা একবেলা খাবার রান্না করতে পারা’র মতো স্কিলগুলো!

আর সেজন্যেই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছে — স্কুল কি আমাদের এমন স্কিলগুলো শিখিয়েছে বা আমাদের ভবিষ্যত জেনারেশনকে এমন স্কিলগুলো শেখাবে, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই আমাদের প্র্যাকটিক্যাল লাইফে প্রত্যেক সপ্তাহে সপ্তাহে কাজে আসবে, ব্যবহার করতে হবে?

আমার উত্তরটা হচ্ছে, এই স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে একটা বিশাল ব্যবধান রয়ে গেছে আর সেটা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা কোন স্কিলগুলো শিখছে আর কোন স্কিলগুলো আসলেই শিক্ষার্থীদের শেখা দরকার; এই পয়েন্টে!

যেটা আসলেই প্রয়োজন, ভ্যালুয়েবল এবং প্র্যাকটিক্যাল; সেটা না শিখিয়ে যেটা আমাদের সাধারণ বা ‘অসাধারণ’ জ্ঞানকে বাড়াতে সাহায্য করবে; সেটা শেখানো হচ্ছে!

আমি এই পোস্টটা লিখতে বসেছি, ৭টা স্কিল মাথায় রেখে; যেগুলো আমার মনে হয়েছে – আমি স্কুলে থাকতে শিখে ফেলতে পারলে; হয়তো আরো অনেকটা অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারতাম; রিয়্যাল ও প্র্যাকটিক্যাল লাইফে!

এই স্কিলগুলো, প্রত্যেক মানুষের জন্য শেখা উচিত এবং এগুলোই প্র্যাকটিক্যাল লাইফে; আপনার-আমার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে হচ্ছে!

১. ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি

অর্থ ম্যানেজ করতে পারাটা শুধুমাত্রই একটা স্কিল নয়, বরঞ্চ এটা এক ধরণের সার্ভাইভাল টুল!

NEFE এর একটা স্টাডিতে দেখা যায়, ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৮৮% এর মতেই – তারা যদি তাদের লাইফে শুরুর দিকে ব্যাসিক ফাইন্যান্সিয়াল জ্ঞান রাখতো, তাহলে সেখান থেকে তারা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারতো!

শেখা শুরু করতে চাইলে,

  • বাজেটিং
  • ইনভেস্টিং
  • রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং
  • ঋণ ম্যানেজমেন্ট, এই স্কিলগুলো দিয়ে শেখা শুরু করতে পারেন!

২. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা EQ

সব প্রশ্নের উত্তর জানলেই, আপনাকে যেকোনো কোম্পানি হায়ার করে বসবে না বা কারো ইমোশনের দিকে না তাকিয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকে বন্ধু তৈরি করা যাবে না! কারণ, এই দুই ক্ষেত্রেই, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের মতো সফট স্কিল খুবই কাজে আসছে!

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে, নিজের ও নিজের আশেপাশের মানুষগুলোর ইমোশন বা অনুভূতিগুলোকে বুঝতে পারা এবং ম্যানেজ করতে পারা! লিডারশিপের, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা সফট স্কিল হচ্ছে – EQ

শেখা শুরু করতে চাইলে, এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

  • সেলফ অ্যাওয়ারনেস
  • ইমোশনাল ডিসিশন মেকিং
  • সহানুভূতি
  • কনফ্লিক্ট রেজ্যুলুশন

TalentSmart এর একটা পরিসংখ্যান অনুসারে, ৯০% টপ পারফর্মারই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন – সেই পারফর্ম্যান্স নিজের পার্সোনাল লাইফ কিংবা ওয়ার্ক লাইফ অথবা যেকোনো রিলেশনশিপের ক্ষেত্রেও হতে পারে!


৩. ক্রিটিক্যাল থিংকিং

আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায়, ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে পারা; খুবই রেয়ার একটা সফট স্কিল। ক্রিটিক্যাল থিংকিং মানে, আরো বেশি তথ্য বা ইনফরমেশন কনজ্যুম করা নয়; বরঞ্চ যে তথ্যগুলো দরকার সেগুলো জানা এবং সেই তথ্যগুলোকে ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাই ক্রিটিকাল থিংকিং।

শেখা শুরু করতে চাইলে, এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

  • প্রব্লেম সল্ভিং
  • ডিসিশন মেকিং
  • অ্যানালিটিক্যাল স্কিলস

২০২১ সালের একটা সার্ভে অনুসারে, ৮৯% ট্রেইনার ও টিচারদের মতেই ক্রিটিক্যালি একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারা; যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিলগুলোর একটা – অথচ মাত্র ১৯% শিক্ষার্থী ক্রিটিক্যাল থিংকিং ডেভেলপ করার দিকে মনযোগ দিয়ে থাকে!


৪. টাইম ম্যানেজমেন্ট

সময় – আমাদের জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় রিসোর্স – অথচ সময় ম্যানেজ করাটাই আমাদের শেখানো হয় নি। ফিজিক্যাল ও মেন্টাল স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং প্রোডাক্টিভিটির গ্রোথ ড্র্যামাটিক্যালি বাড়ানোর জন্য, টাইম ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল।

শেখা শুরু করতে চাইলে, এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

  • প্রায়োরিটাইজেশন
  • প্ল্যানিং ও এক্সিকিউশন টেকনিকস
  • ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স
  • প্রোডাক্টিভিটি হ্যাকস ও টেকনিকস

Workfront এর একটা স্টাডি অনুসারে, ৫৫% কর্মচারীর মতে তাদের প্রোডাক্টিভিটিতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে, সময়কে সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে না পারা!


৫. কমিউনিকেশন স্কিল

এফেক্টিভলি কথা বলতে পারা ও আপনি যেটা বোঝাতে চাইছেন; সেটাকে এফেক্টিভলি ‘বিক্রি’ করতে পারাটাই; সফল কমিউনিকেশন!

কমিউনিকেশন স্কিল ছাড়া; কোনো চাকরিতেই আপনি নিজেকে বিক্রি করতে পারবেন না, ক্রেতা আপনার পন্য বা সেবা নিতে চাইবে না, আপনার আশেপাশের মানুষজনকেও আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন না; যেভাবে আপনি চাইছেন!

সেজন্যে এফেক্টিভ কমিউনিকেশন জানলে, ইমেইল লেখা কিংবা প্রেজেন্টেশন দেয়া অথবা কোনো কঠিন মুহুর্তে নিজেকে প্রকাশ করতে বেগ পেতে হবে না! এমনকি, অনেক মেন্টরকেই আমি বলতে শুনেছি; কমিউনিকেশন এমন একটা স্কিল যেটার মাধ্যমে আপনার জীবনে সফলতা নিয়ে আসা সম্ভব – গ্যারান্টি দিয়ে!

শেখা শুরু করতে চাইলে, এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

  • পাবলিক স্পিকিং ট্যাকটিকস
  • রাইটিং স্ট্র্যাটেজিস
  • অ্যাক্টিভ লিসেনিং

LinkedIn এর একটা সার্ভে অনুসারে, প্রায় ৫৮% লিডারদের মতেই কমিউনিকেশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল; যদি ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জন করতে চান!


৬. অ্যাডাপ্টিবিলিটি

আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, ২০২০ সালের সাথে ২০২৪ সালের কতটা পার্থক্য! অথচ, সময়ের ব্যবধান মাত্র ৪ বছরের!

আমাদের আশেপাশের প্রত্যেক এলিমেন্টেই অনেক পরিবর্তন আসছে! আর সেই পরিবর্তনে সার্ভাইভ করার জন্য; খাপ খাইয়ে নেয়াটা আমাদের স্কুলে বা কলেজ শেখানো হয় নি!

কিভাবে নতুন চাকরি কিংবা নতুন একটা প্রযুক্তি অথবা গ্লোবাল কোনো প্যানডেমিকে আমরা নিজেদের অ্যাডাপ্ট করবো, কিভাবে খাপখাইয়ে নিয়ে সার্ভাইভ করবো; সেটা শেখা খুবই জরুরী!

শেখা শুরু করতে চাইলে, এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

  • ফ্লেক্সিবিলিটি ট্যাকটিকস
  • সহনশীলতা
  • কন্টিনিউয়াস লার্নিং
  • পজিটিভ মাইন্ডসেট ডেভেলপমেন্ট

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের একটা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৯৪% বিজনেস লিডারই তাদের টিমে এমন কাউকে চায়; যে সহজেই খাপখাইয়ে নিতে পারবে, ভবিষ্যতের স্কিলগুলোর সাথে!


৭. পরিবেশগত সচেতনতা

আমাদের স্বাস্থ্য, সরাসরি আমাদের পরিবেশের সাথে যুক্ত।

স্কুলে/কলেজে যতটা গুরুত্ব আমাদের অন্যান্য বিষয়ে দেয়া হয়েছে, ততোটা গুরুত্ব – পরিবেশের উপর সচেতনতা বৃদ্ধিতে দেয়া হয় নি। অথচ, এটা ‘লিটারেলি’ আমাদের ও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সার্ভাইভালের প্রশ্ন!

শেখা শুরু করতে চাইলে, এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

  • সাস্টেইনিবিলিটি টেকনিকস
  • রিসাইক্লিং ম্যাথডস
  • আবহাওয়া ও পরিবেশের পরিবর্তন
  • ন্যাচারাল রিসোর্স সংরক্ষণ

জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীর জনসংখ্যা ২০৫০ সালের ভেতর প্রায় ১ হাজার কোটিতে পৌঁছাবে! ভেবে দেখুন, সাস্টেইনিবিলিটি কতটা জরুরী!

এমন একটা পৃথিবী কবে দেখবো, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ থেকেই কমিউনিকেশন, নেগোসিয়েশন আর ক্রিয়েটিভ স্কিলগুলো – শিখে আসতে পারবে; যেখানে স্কুল-কলেজের প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী অর্থ সম্পর্কে জানে-চেনে এবং তারা ক্রিটিক্যালি সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম!

এই ভবিষ্যতের জন্যেই আমার-আপনার; আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিখিয়ে যেতে হবে, পথ দেখিয়ে যেতে হবে। শুধুমাত্র পরিক্ষায় পাশ করা কিংবা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্যেই নয় — প্র্যাকটিক্যাল লাইফে যে স্কিলগুলো কাজে আসবে; সেগুলো শেখার জন্যে উদ্বুদ্ধ করাটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

স্কুল-কলেজের এই ক্ষমতাটা রয়েছে, তারা চাইলে ভবিষ্যত প্রজন্মের চিন্তাধারা আর মাইন্ডসেট সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে। আর সেজন্যে, আমাদের স্ক্ল-কলেজগুলোর প্রায়োরিটি দেয়া উচিত এমন সব স্কিলের দিকে; যেগুলো আমাদের বাচ্চাকাচ্চাদের শুধুমাত্র বইপোকা করে তুলবে না বরঞ্চ প্র্যাকটিক্যাল লাইফে স্মার্ট এবং ইন্টেলিজেন্ট করে তুলবে!

শিক্ষা’র মূলমন্ত্র কী?

শিক্ষার মূলমন্ত্র হলো, শিখতে হবে, জানতে হবে এবং বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে!

আর সেজন্যে, প্রত্যেক স্কুল-কলেজ, ট্রেইনার, টিচার, এডুকেটর আর পলিসি মেকারদের উদ্দেশ্যে বলছি,

শিক্ষা হোক, দক্ষতা অর্জনের জন্য!

শিক্ষা হোক বুদ্ধিমত্তা, ভবিষ্যত প্রজন্ম আর সমাজের উন্নতির জন্য!

11 thoughts on “৭টা স্কিল, প্রত্যেক স্কুলে শেখানো উচিত”

  1. এত গুরুত্বপূর্ণ ৭টি স্কিল তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top