ধরে নিন, আপনার কাছে এমন একটা ঘড়ি আছে; যেটা ব্যবহার করলে আপনি প্রত্যেকদিনে অন্যদের চেয়ে বেশি সময় পাবেন!
খুবই ভালো হতো, তাই না – যদি চব্বিশ ঘন্টার বদলে বত্রিশ ঘন্টায় এক দিন হতো!
কিন্তু, আপনার কাছে সেই জাদুর ঘড়ি না থাকলেও একটা সফট স্কিল আছে, যেটা এফেক্টিভলি ব্যবহার করতে পারলে; আপনার দিনের চব্বিশ ঘন্টাও – বত্রিশ ঘন্টার মতো মনে হবে!
আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, কিংবা কোনো একটা স্কিল শেখার প্ল্যান করছেন ;তাহলে সময়কে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় এবং কিভাবে টাইম ম্যানেজমেন্টকে কাজে লাগিয়ে আপনার লার্নিংয়ের জার্নিটাকে আরো এফেক্টিভ করা যায় – সেটা শেখা উচিত!
টাইম ম্যানেজমেন্ট মানে, সারাদিনে একটা টাস্কলিস্ট করে সেখানে সবকিছু যুক্ত করে দিয়ে শর্টকাটে করে ফেলা নয়! একটা এফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট রুটিন, আপনাকে আরো প্রোডাক্টিভ ও মনোযোগী করে রাখবে এবং আপনার কাজগুলোকে আরো উপভোগ্য করে তুলবে!
যে শিক্ষার্থীরা তাদের সময়, অন্যদের চেয়ে ভালোভাবে ম্যানেজ করতে পারে; তাদের গ্রেড ৫০% বেশি হয়ে থাকে; বাকিদের তুলনায়! এমনকি, যেসব কর্মচারীরা তাদের সময় অন্যদের তুলনায় এফেক্টিভলি ম্যানেজ করতে পারেন; তারা প্রত্যেক বছরে প্রোডাক্টিভিটির পেছনে খরচ হওয়া ১০ হাজার ডলার বা প্রায় ১০ লক্ষ টাকা সেইভ করতে সক্ষম হয়!
এই টাইম ম্যানেজমেন্ট গাইড – এমন কিছু স্ট্র্যাটেজি, হ্যাকস ও ট্যাকটিকস আপনাকে বাতলে দেবে, যেগুলো আপনিও ব্যবহার করতে পারেন; আপনার সময়কে সঠিকভাবে ও আরো প্রোডাক্টিভলি ম্যানেজ করতে!
টাইম ম্যানেজমেন্ট ফান্ডামেন্টালস
এক কথায় বললে,
Time management is the process of planning and exercising conscious control over the amount of time spent on specific activities.
আরো সহজ করে বললে,
টাইম ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে, আপনার প্রত্যেক দিন-সপ্তাহ-মাস এবং বছরের জন্য এমন একটা রোডম্যাপ তৈরি করা; যাতে করে আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেনঃ
- আপনি কোথায় যাচ্ছেন,
- কী করছেন এবং
- কোন কাজটা কীভাবে ও কখন করলে সেটা আরো সুক্ষ্ণভাবে সম্পন্ন করা যাবে!
বুঝুন, মূল পয়েন্টটা কোথায়!
টাইম ম্যানেজমেন্ট শুধুমাত্র, সবগুলো কাজ সম্পন্ন করতে পারাই নয়; বরঞ্চ সঠিক কাজগুলো সূক্ষ্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারাই টাইম ম্যানেজমেন্ট!
ধরুন, আপনি বার ঘন্টা ধরে একটা বিষয় নিয়ে পড়ছেন! কিন্তু, বার ঘন্টা পর জানতে পারলে, এই বিষয়ে আপনার কোনো পরীক্ষাই নেই; সম্পূর্ণ ভুল একটা বিষয় নিয়ে আপনি বার ঘন্টা সময় কাটালেন!
এফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্টের কাজই হচ্ছে, সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা!
লার্নিংয়ের জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট
দেখুন — লার্নিং; সেটা অ্যাকাডেমিক হোক কিংবা যেকোনো স্কিল ডেভেলপমেন্ট; যেকোনো ধরণের লার্নিংয়ের ক্ষেত্রেই খুব সহজেই অলসতা চলে আসে! এতকিছু শিখতে হয় একটা বিষয় নিয়ে, আর মাঝে মাঝে মনে হয় – আচ্ছা, এতকিছু শেখার সময় কি আছে?
কিন্তু, সিক্রেটটা হচ্ছে, টাইম ম্যানেজমেন্ট!
টাইম ম্যানেজমেন্ট, আপনাকে অল্প সময়ে এফেক্টিভলি শিখতে সাহায্য করবে!
একটা রিসার্চ অনুসারে, যেসব শিক্ষার্থীরা টাইম ম্যানেজমেন্টকে এফেক্টিভলি ব্যবহার করতে পারে; তারা ৮০% সময়েই অন্যদের চেয়ে বেশি তথ্য মনে রাখতে পারে, ব্যবহার করতে পারে এবং তারাই জটিল বিষয়গুলোকে দ্রুত হজম পারে!
আগেও বলেছি, এটা জাদু নয়; এর কারণ হচ্ছেঃ তারা, তাদের সময়কে ডিপ লার্নিংয়ে যুক্ত রাখে; যেখানে অন্যরা শেষ মুহূর্তে গিয়ে জগাখিচুড়ি বাধিয়ে ফেলে! যেসব অফিসে এফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস করা হয়; সেখানে ২৫% প্রোডাক্টিভিটির গ্রোথ দেখা যায়!
এফেক্টিভ লার্নিংয়ের জন্য ৪টি টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিকস
আমাদের ব্যাসিকটা যেহেতু পরিষ্কার, চলুন তাহলে এবার কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিক দেখে নিই; যেগুলো আপনি যেকোনো ধরণের লার্নিং বা স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে পারবেনঃ
১. Pomodoro Technique (পোমোডোরো টেকনিক)
টার্গেটঃ ফোকাস এবং রিটেনশন বৃদ্ধি
১৯৮০ সালের দিকে, টাইম ম্যানেজমেন্টের এই ম্যাথড, Pomodoro Technique তৈরি করেন Francesco Cirillo (ফ্রান্সেসকো সিরিলো)।
এই টেকনিক খুবই সহজ এবং একইসাথে খুবই শক্তিশালী!
এই টেকনিক অনুসারে, ২৫ মিনিট কাজ করুন তারপর ৫ মিনিটের ব্রেক নিন! এই সার্কেলটাকে বলা হয়, একটা পোমোডোরো! এভাবে চারটা পোমোডোরো সার্কেল কমপ্লিট করার পর; একটা লম্বা ব্রেক নিন ১৫-৩০ মিনিটের!
এই টেকনিক কেন কাজ করে?
কারণ, আমাদের ব্রেইন লম্বা সময়ের জন্য ফোকাস ধরে রাখতে পারে না! আমরা যখন সেই লম্বা কাজটাকে ‘পোমোডোরো’তে ভেঙে ভেঙে করছি; তখন আপনার ব্রেইনের পক্ষেও সেই কাজ সংক্রান্ত তথ্যগুলো রিটেইন করা এবং সেগুলোকে এফেক্টিভলি অর্গানাইজ করা সম্ভব হয়!
যখন জটিল বিষয়গুলো শিখছেন, তখন এই টেকনিক অ্যাপ্লাই করুন! ছোট ছোট লার্নিং সার্কেলের কারণে আপনি দ্রুত তথ্যগুলো মনে রাখতে পারবেন এবং আপনার শেখার মোটিভেশন ও মনোযোগ দুটোই বেড়ে যাবে!
২. 80/20 Rule (৮০/২০ রুল)
টার্গেটঃ ফোকাস বৃদ্ধি
৮০/২০ রুল’টিকে অনেকেই Pareto Principle নামেও চিনে থাকেন! ৮০/২০ রুল অনুসারে, আপনার কাজের ৮০% ফলাফল আসে, ২০% কাজ থেকে!
যখন এই সূত্রকে আপনি লার্নিংয়ে অ্যাপ্লাই করতে যাবেন, তখন এর মানে দাঁড়ায়; আপনার কাছে থাকা ২০% লার্নিং রিসোর্স থেকেই আপনি ৮০% কাজ শিখে ফেলতে পারবেন! বাকি ৮০% লার্নিং রিসোর্স, আপনাকে বাকি ২০% ফলাফল এনে দেবে!
সেজন্যে, আমিও বারংবার বলি – এতশত কোর্স আর রিসোর্স জমিয়ে কোনো লাভ নেই; যদি আপনি ২০% রিসোর্সও কনজ্যুম করতে না পারেন!
অর্থাৎ, প্র্যাকটিক্যালি এই রুলকে কাজে লাগাতে হলে,
যেকোনো লার্নিংয়ের সময়, মূল কনসেপ্টগুলো শুরুতে কমপ্লিট করুন, ভালো করে বুঝে শুনে ফান্ডামেন্টালস ক্লিয়ার করুন! সেইসব ছোট্ট স্কিলগুলোকে শেখার চেষ্টা করুন, যেগুলো আপনার মূল স্কিল শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে! তারপর মূল স্কিলের ফান্ডামেন্টাল কমপ্লিট করে অ্যাডভান্সড লেভেল সম্পর্কে প্র্যাকটিক্যালি ধারণা নিন!
ধরুন, আপনি পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন! এক্ষেত্রে পুরো বইয়ের শুরু থেকে শেষ অবধি আবার চোখ বুলিয়ে দেখার চেয়ে বা আবার শুরু থেকে শুরু করার চেয়ে; মূল টপিকগুলোর দিকে মনোযোগ দিন যেগুলো পরিক্ষায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি! অর্থাৎ, সূত্রানুসারে, আপনার ২০% এফোর্ট দিচ্ছেন ৮০% রেজাল্টের দিকে তাকিয়ে!
৩. Time Blocking (টাইম ব্লকিং)
টার্গেটঃ প্রত্যেক দিনকে ইফিশিয়েন্ট করে তোলা
টাইম ব্লকিং এমন একটা টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিক, যেখানে আপনার পুরো দিনকে আপনি ছোট ছোট কিছু সময়ে ভাগ করে থাকেন (টাইম ব্লক) – যেখানে প্রত্যেক টাইম ব্লক; কোনো না কোনো নির্দিষ্ট কাজকে বোঝাচ্ছি!
যেমন, আপনি হয়তো আপনার পুরো দিনটাকে এভাবে কয়েকটা টাইম ব্লকে ভাগ করলেনঃ
- সকাল ৯-১১টাঃ পড়াশোনা
- সকাল ১১-১২টাঃ এক্সারসাইজ
- দুপুর ১-৩টাঃ কাজ
এই ম্যাথড সবচেয়ে ভালো কাজ করে, লার্নারদের জন্য রুটিন তৈরিতে!
এই প্রসেসে তৈরি রুটিন, একজন লার্নারকে কনফিউজড হয়ে বসে থাকতে বাধা দেয়; কারণ, একটা কাজ শেষ হলেই অন্য আরেকটা টাইম ব্লক শুরু হয়ে যাচ্ছে! আর সবগুলো টাইম ব্লক মিলে যেহেতু আপনার সবগুলো কাজ সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে; সেহেতু আপনাকে ভাবতেও হচ্ছে না; আসলে আপনি কোন সময় কী কাজ করবেন!
টাইম ব্লক টেকনিক ব্যবহার করে যখন লার্নিংয়ের রুটিন তৈরি করবেন তখন সেই রুটিনে কালার কোডিং করে রাখতে পারেন স্পেসিফিক টাইম ব্লক বা কাজগুলোকে! যেমন, নীল হতে পারে স্টাডি টাইম কিংবা সবুজ হতে পারে ব্রেক টাইম ইত্যাদি!
৪. Eisenhower Matrix (আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স)
টার্গেটঃ কাজের গুরুত্বের উপর প্রায়োরিটি দেয়া
আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স নামটি এসেছে, অ্যামেরিকার ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের থেকে!
এই টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিক অনুসারে, কোন কাজটা কখন করা উচিত; সেটা শুধুমাত্র কাজের গুরুত্বের উপর প্রায়োরিটাইজেশন করলেই টের পাওয়া যাবে! এই ম্যাট্রিক্স চারটা ভাগে বিভক্তঃ
- জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ: যেসব কাজ আপনার সবার আগে করা উচিত বা এখনই করা উচিত
- গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জরুরী নয়: যেসব কাজ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু পরে করলেও চলবে
- জরুরী কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়: যেসব কাজ দ্রুত করতে হবে কিন্তু সেগুলো এখনই ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়
- জরুরী নয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নয়: যেসব কাজ সবার শেষে করা যাবে অথবা না করলেও চলবে
যখন লার্নিংয়ে এই ম্যাট্রিক্স অ্যাপ্লাই করতে যাবেন, তখন এই ম্যাট্রিক্স ফলো করেই আপনি বাছাই করতে পারবেন এবং এফেক্টিভলি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন; আপনার কোন বিষয়টা শুরুতে পড়া উচিত এবং কোন বিষয়টা সবার শেষে! এই ম্যাট্রিক্স ফলো করার মাধ্যমে আপনি সবচেয়ে অল্প সময় দিয়ে, সবচেয়ে সেরা ভ্যালু অর্জন করতে সক্ষম হবেন!
এটা নিয়ে আইজেনহাওয়ারের একটা সুন্দর উক্তিও আছে,
যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা প্রায় কখনোই জরুরী হয় না এবং যেটা জরুরী সেটা প্রায় সময়ই গুরুত্বপূর্ণ হয় না!
টাইম ম্যানেজমেন্টের শত্রু
আপনার, পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিক জানা থাকলেও – টাইম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জগুলো আপনাকে প্রায়ই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাবে , অলস করে তুলবে!
চলুন, টাইম ম্যানেজমেন্টের ‘কুখ্যাত তিন শত্রু’ নিয়ে কথা বলা যাক!
১. Procrastination (প্রোক্র্যাস্টিন্যাশন – ঢিলেমি, গড়িমসি করা)
প্রোক্র্যাস্টিন্যাশনের একটা সিনেম্যাটিক নাম রয়েছে, The Silent Productivity Killer
টাইম ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই ঢিলেমি! আমরা সবাই প্রোক্র্যাস্টিনেট করি — কাজ না করে – জমিয়ে রেখে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই কাজটাকে ফেলে রাখি এবং তারপর কোনোমতে শেষ সময়ে সেটাকে পূরণ করার চেষ্টা করি!
প্রোক্র্যাস্টিন্যাশনের সমাধান?
একসাথে বসে যতক্ষণ কাজ করতে পারবেন বা লার্নিং করতে পারবেন; ঠিক ততক্ষণ সেটা মনোযোগ দিয়ে করুন! এভাবে বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করে, সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করুন! সবচেয়ে সহজ কাজটা দিয়ে শুরু করুন!
এতে দ্রুত প্রথম কাজগুলো পূরণ করে ফেলতে পারলে, পরে কঠিন বা জটিল কাজগুলোর জন্য যথেষ্ট সময় নিতে পারবেন! চাইলে এক্ষেত্রে টেকনোলজি আপনাকে সাহায্য করতে পারে! যেমন, Trello বা Asana এর মতো অনেক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো আপনার ছোট ছোট টাস্কের ট্র্যাক রাখবে এবং আপনাকে ডেডলাইনের ভেতরে পূরণ করতে সাহায্য করবে!
এই তথ্যটা একবার চিন্তা করে দেখুন,
৮৮% কর্মচারীরাই প্রত্যেক দিনে ৮ ঘন্টা কাজের ভেতর অন্তত ১ ঘন্টা অলসতা করে কাটিয়ে দেন এবং এই কারণে সেই কোম্পানিতে বা ব্যবসায়, শুধুমাত্র প্রোডাক্টিভিটির পেছনে প্রত্যেক বছরে প্রায় ১০ হাজার ৩৯৬ ডলার খরচ করতে হয়!
২. Distractions (ডিস্ট্রাকশন – মনোযোগ নষ্টকারী যেকোনো কিছু)
দুনিয়ায় এখন কি আর চুপচাপ থাকা যায়?
এখন কি আর কান পাতলে, শুধুমাত্র ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ পাওয়া যায়?
নিস্তব্ধতা — এখন আর এই দুনিয়ার অংশ নয়! সকালে ঘুমিয়ে ওঠার পর থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, আমরা সবসময়েই কিছু না কিছু শুনছি, কিছু না কিছু করছি! আর এই কাজের মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া, নোটিফিকেশন, আপনার আশেপাশের পরিবেশ – প্রত্যেকটা ছোট থেকে ছোট বিষয় আপনার মনযোগ কেড়ে নিতে পারে, আগ্রহটাকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারে!
আর এই কারণেই আমাদের সময় নষ্ট হয় এবং লার্নিংয়ে পিছিয়ে পড়তে হয় কিংবা কারো কারো পক্ষে লার্নিংই সম্ভব হয় না!
ডিসট্রাকশনের সমাধান?
মনোযোগ নষ্ট হবে না, এমন একটা স্টাডি জোন তৈরি করুন! লার্নিং শুরু করার আগেই আপনার নোটিফিকেশন বন্ধ করে নিন ; আর এটা চাইলে Forest এর মতো অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে করা সম্ভব!
আরেকটা সহজ প্রসেস হচ্ছে, দুই মিনিট রুল ব্যবহার করাঃ যদি একটা কাজ করতে দুই মিনিটের কম সময় লাগে তাহলে সেটা এখনই করে নিন আর যদি বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় ,তাহলে সেটা পরবর্তীতে করার জন্য নোট করে রাখুন!
৩. Burnout (বার্নআউট – অতিরিক্ত পরিশ্রম বা শক্তিক্ষয় বা সম্পূর্ণ ক্লান্ততা)
বার্নআউট হচ্ছে এমন একটা সিচুয়েশন, যেখানে আপনার যেকোনো ধরণের ইমোশনাল, ফিজিক্যাল এবং মেন্টাল প্রেসার নেয়ার মতো শক্তি নেই!
এই বার্নআউটের কারণেই আমাদের মোটিভেশন কমে যায়, আমাদের স্ট্রেস বাড়তে শুরু করে এবং আমাদের শারীরিক রোগশোক ধরা দিতেও শুরু করে!
বার্নআউটের সমাধান?
লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়মিত সময় করে ব্রেক নিন, মাইন্ডফুলনেস ট্যাকটিকস অ্যাপ্লাই করুন এবং যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে, সেগুলোর জন্যেও আলাদা করে সময় রাখুন!
এটা ভুলে গেলে চলবে না, এফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট মানে হার্ডওয়ার্ক নয়, স্মার্ট ওয়ার্ক!
এই বার্নআউটে ভুগে থাকেন প্রায় ৬৭% শিক্ষার্থী ও প্রফেশনালরা – যার কারণে অনেকেই ট্যালেন্টেড হওয়া সত্ত্বেও কাজের প্রেসার নিতে না পেরে সম্পূর্ণরুপে ক্লান্ত হয়ে যান এবং শেষমেষ সেই কাজ করার মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেন!
শেষ করার আগে, একটা লার্নিং টেকনিক বলে দিচ্ছি, যেটা আপনার লার্নিংয়ের রিটেনশন ক্ষমতা ৪০০% বাড়িয়ে দিতে সক্ষম!
অল্প সময়ে দ্রুত শেখার জন্য এই লার্নিং টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন!
খুবই পরিচিত এই লার্নিং টেকনিক হয়তো, অনেকেই জানেন! যারা জানেন না, তারা এই লার্নিং টেকনিক অ্যাপ্লাই করতে পারেন – যেকোনো স্কিল ডেভেলপমেন্ট কিংবা পড়াশোনার ক্ষেত্রে!
এই লার্নিং টেকনিক হচ্ছে, Feynman Technique (ফাইনম্যান টেকনিক)
Feynman Technique এর নামকরণ করা হয়েছে, ফিজিসিস্ট রিচার্ড ফাইনম্যানের একটা ম্যাথড থেকে! যেটাকে এক কথায় বলা যায়, শেখানোর মাধ্যমে শেখা বা Learning by Teaching
আইডিয়াটা খুবই সহজ, যদি আপনি কোনো ব্যক্তিকে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারেন, তাহলে আপনি সেটা আসলেই জানেন!
একটা বিষয় শেখার পর – আপনার যেকোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্য বা কেউ না থাকলে, আপনি নিজেকেই সেই বিষয়টা বোঝাতে শুরু করুন, শেখাতে শুরু করুন! এক্ষেত্রে আপনার বোঝার ক্ষমতাও আরো বাড়বে এবং যেসব জায়গায় আপনার কমতি রয়েছে সেই পয়েন্টগুলো বের হয়ে আসবে!
আমার প্রথম কোর্স তৈরির করার পেছনে কারণও এটাই ছিলো, শেখানোর মাধ্যমে শেখা! তারপর সেটার চাহিদা ও অন্যান্য মেট্রিক্স দেখে, সেটাকে মনিটাইজ করার চিন্তা মাথায় আসে!
সময়, আপনার সবচেয়ে ভ্যালুয়েবল রিসোর্স; যদি এই সময়কে ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে আপনার পক্ষেও আপনার লার্নিং পটেনশিয়াল নিজের চোখে দেখা সম্ভব এবং নিজের হাতে আনলক করা সম্ভব!
এতক্ষণ যে টেকনিক আর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কথা বললাম — সেগুলো ঠিকঠাক অ্যাপ্লাই করতে পারলে আপনার লার্নিং জার্নি আরো এফেক্টিভ, ইফিশিয়েন্ট এবং আরো এনজয়েবল করা সম্ভব হবে!
কিন্তু, এটা মনে রাখতে হবেঃ টাইম ম্যানেজমেন্ট মানে নিজেকে ব্যস্ত রাখা নয় বরঞ্চ প্রোডাক্টিভ হওয়া! যেটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজন – সেটাকে গুরুত্ব দেয়া এবং লার্নিংয়ে একটা ব্যালেন্স তৈরি করাই টাইম ম্যানেজমেন্ট!
তাহলে আমাদের পরের ধাপটা কী?
আজকে থেকেই চেষ্টা করুন, এখান থেকে দু-একটা টেকনিক অ্যাপ্লাই করতে! আর শেখার জন্য আরো সময় খুঁজে বের করতে!
কারণ, যত বেশি সময় আপনার হাতে ফাঁকা পড়ে থাকবে, ততো বেশি সময় আপনি – আপনার পরিবার-প্রিয়জনদের মাঝে কাটাতে পারবেন!
Time is the most valuable thing a man can spend. (Theophrastus)
অনেক কাজে আসবে ভাই
Hope it helps
অনেক ধন্যবাদ ভাই
Pleasure brother
খুবই সুন্দর লেখা
Thanks mate.
সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই, সফলতা
একদম
সময় = সুপারপাওয়ার
Yesssss